আহসান মঞ্জিল ( Ahsan Manzil ) গোলাপি এই প্রাসাদটি একসময় ছিল ঢাকার নবাব পরিবারের বাসস্থান এবং দরবার। নজরকাড়া এই ভবনটি পুরাণ ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এই ভবনের সাথে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার শত বছরের ইতিহাস। নান্দনিক এই প্রাসাদটি নির্মাণে সময় লেগেছিল ১৩ বছর। জাতীয় জাদুঘরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে এই প্রাসাদটিকে।
মুঘল আমলে এটি মূলত জমিদার শেখ এনায়েত উল্লাহর একটি বাগানবাড়ি ছিল। শেখ এনায়েত উল্লাহ কুমোরতলীতে বিশাল এক এলাকা অধিগ্রহন করে তাঁর বাগানবাড়িতে অন্তর্ভুক্ত করেন। এখানে তিনি ‘রঙমহল’ নামে একটি প্রমোদভবন নির্মাণ করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে শেখ এনায়েত উল্লাহর মৃত্যুর পর তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বনিকদের কাছে বিক্রয় করে দেন। আনুমানিক ১৮৩০ সালে বেগমবাজারে বসবাসকারী খাজা আব্দুল গনির পিতা খাজা আলীমউল্লাহ এটি কিনে নেন। খাজা আব্দুল গনি ১৮৫৯ সালে এই নান্দনিক প্রাসাদ নির্মানের কাজ শুরু করেন, ১৮৭২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়। খাজা আব্দুল গনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসান উল্লাহর নামানুসারে এই প্রাসাদটির নাম দেন আহসান মঞ্জিল।
মার্বেল পাথর দিয়ে দোতলা এ ভবনের মেঝে এবং বারান্দা তৈরি করা হয়েছে। আহসান মঞ্জিলের ছাদের উপরের সুন্দর গম্বুজটি ছিল ঢাকা শহরের সবচেয়ে বড় গম্বুজ। নান্দনিক এই প্রাসাদের পশ্চিমে রয়েছে জলসাঘর, উত্তরে রয়েছে লাইব্রেরী আর পূর্বদিকে আছে বড় খাবার ঘর। প্রাসদটির ছাদ সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। নিচতলায় আছে বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা। প্রাসাদের দরবার হলটি সাদা, হলুদ ও সবুজ পাথরের তৈরি। এই প্রাসাদে আরো আছে অতিথিদের থাকার জায়গা, নাচঘর, বৈঠকখানা আর আবাসিক কক্ষ। প্রাসাদে প্রতিটি কক্ষের আকৃতি অষ্টকোন। আহসান মঞ্জিলের সামনেই রয়েছে চমৎকার সবুজ মাঠ ও ফুলের বাগান।
ঢাকা শহরের প্রথম ইট পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে মনে করা হয় আহসান মঞ্জিলকে। তখনকার নবাবদের হাতেই প্রথম এই প্রাসাদে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে। এই প্রাসাদের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদের বেশ আকৃষ্ট করে। যতদুর জানা যায়, লর্ড কার্জন ঢাকায় আসলেই এই ভবনে থাকতেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর নবাবের পরিবার এটিকে নিলামে বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তাদের এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে এখানে জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। কারন তিনি ভবনটির ঐতিহাসিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করেন। ১৯৯২ সালে আহসান মঞ্জিল সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শন সংখ্যা ৪ হাজার ৭৭ টি। ২৩টি ঘরে সংগৃহীত নিদর্শন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি নয়টি কক্ষ তখনকার নবাবী আমলের মতই সাজানো রয়েছে, যা দেখলে আপনি সেই নবাবী আমলে ফিরে যাবেন।
জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য যা যা রয়েছেঃ
আহসান মঞ্জিলের ইতিহাস, নবাবদের পরিচিতি, নবাবদের বংশ তালিকা, নবাবদের ব্যবহৃত ঢাল ও তরবারি, লোহার সিন্দুক, কাঠের আলমারী, বড় আয়না, ডাইনিং রুম, ড্রয়িং রুম, হাতির মাথার কঙ্কাল, চীনামাটি ও কাঁচের থালা বাসন, সিংহাসন, ক্রিষ্টালের তৈরি চেয়ার টেবিল, নবাবদের অলংকৃত রূপা, তৈলচিত্র, ফুলদানী ইত্যাদি।
টিকেটের মূল্যঃ
প্রাপ্ত বয়ষ্ক সাধারণ দর্শনার্থীর জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ১২ বছরের নিচে হলে জনপ্রতি টিকেট মূল্য ১০ টাকা। সার্কভূক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা আর অন্যান্য সকলদেশের নাগরিকদের জন্য ৫০০ টাকা। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনামূল্যে আহসান মঞ্জিল দেখার সুযোগ এবং ছাত্রছাত্রীরা আবেদনের প্রেক্ষিতে বিনামূল্যে জাদুঘর প্রদর্শন করতে পারবে।
আহসান মঞ্জিল প্রদর্শনের জন্য আপনি অনলাইনেও টিকেট করতে পারবেন এই ওয়েবসাইট থেকে – https://www.ahsanmanzilticket.gov.bd/
আহসান মঞ্জিল প্রবেশের সময়সূচীঃ
প্রতি বৃহস্পতিবার এবং সরকারী যে কোন ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর পুরোপুরি বন্ধ থাকে। শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০.৩০ বিকেল ০৫.৩০ পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে। শুক্রবার বিকেল ০৩.০০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাটগামী যে কোন বাসে উঠে লাষ্ট ষ্টপেজ ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নেমে যাবেন। সেখান থেকে সরাসরি একটা রিক্সা নিয়ে অথবা পায়ে হেঁটে চলে যেতে পারবেন আহসান মঞ্জিল। অথবা গুলিস্তান এসে নর্থ সাউথ রোড ধরে কিছুদূর গেলেই পড়বে নয়াবাজার মোড়। নয়া বাজার থেকে চলে যাবেন বাবুবাজার ব্রীজ। বাবুবাজার ব্রীজ থেকে রিক্সায় চলে যাবেন আহসান মঞ্জিল।